BG photo by GarryKillian
‘আর তোমরা আমার স্মরণোদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম করো।’ (সুরা-২০ তহা, আয়াত: ১৪)
‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কর্ম থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা-২৯ আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)

SALAH

সুরা আল-ফীল

সূরা আল-ফীল কোরআন মাজিদের ১০৫ নম্বার সূরা। এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ৫ টি। সূরা আল-ফীল এর বাংলা অর্থ- হাতি। সূরা আল-ফীল মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

নামকরণঃ

প্রথম আয়াতের আসহাবিল ফীল ( আরবী ) শব্দ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে।

আয়াতসমূহঃ

সুরা আল-ফীল (হাতি)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

اَلَمۡ تَرَ کَیۡفَ فَعَلَ رَبُّکَ بِاَصۡحٰبِ الۡفِیۡلِ ۝
উচ্চারণঃ আলাম তারা কাইফা ফা‘আলা রাব্বুকা বিআসহা-বিল ফীল।
অর্থঃ তুমি কি দেখনি যে, তোমার রব হস্তি অধিপতিদের কিরূপ (পরিণতি) করেছিলেন?
اَلَمۡ یَجۡعَلۡ کَیۡدَہُمۡ فِیۡ تَضۡلِیۡلٍ ۝
উচ্চারণঃ আলাম ইয়াজ‘আল কাইদাহুম ফী তাদলীল।
অর্থঃ তিনি কি তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেননি?
وَّ اَرۡسَلَ عَلَیۡہِمۡ طَیۡرًا اَبَابِیۡلَ ۝
উচ্চারণঃ ওয়া আরছালা ‘আলাইহিম তাইরান আবা-বীল।
অর্থঃ তাদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পক্ষীকূল প্রেরণ করেছিলেন –
تَرۡمِیۡہِمۡ بِحِجَارَۃٍ مِّنۡ سِجِّیۡلٍ ۝
উচ্চারণঃ তারমীহিম বিহিজা-রাতিম মিন ছিজ্জীল।
অর্থঃ যারা তাদের উপর প্রস্তর কংকর নিক্ষেপ করেছিল
فَجَعَلَہُمۡ کَعَصۡفٍ مَّاۡکُوۡلٍ ۝
উচ্চারণঃ ফাজা‘আলাহুম কা‘আসফিম মা’কূল।
অর্থঃ অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণ সদৃশ করে দেন।
বিষয়বস্তুঃ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্মের ৫০ বা ৫৫ দিন পূর্বে ইয়ামনের খ্রিষ্টান গভর্ণর আবরাহা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হস্তীবাহিনীসহ বিশাল সৈন্যদল নিয়ে কা‘বাগৃহ ধ্বংস করার জন্য এসেছিলেন। আল্লাহ পাক পক্ষীকুল পাঠিয়ে তাদের মাধ্যমে কংকর নিক্ষেপ করে ঐ বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে দেন। অত্র সূরায় অতীব সংক্ষেপে সেই ঘটনা বিবৃত করা হয়েছে। যাতে মানুষ নিজেদের শক্তির বড়াই না করে এবং আল্লাহর উপরে ঈমান আনে।

SALAH

সূরা আল-কুরাইশ

সূরা কুরাইশ মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৬ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৪ টি।

নামকরণঃ

কুরাইশ আরবের একটি সম্ভ্রান্ত বংশ। এ বংশেই নাবী (সাঃ)-এর জন্ম। সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত কুরাইশ শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এ সূরাকে “সূরা ইলাফ”ও বলা হয়। অনেকে মনে করেন পূর্বের সূরার সাথে এ সূরার সম্পর্ক রয়েছে।

শানে নুযূলঃ

সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত কুরাইশ শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। একে "সূরা ইলাফ" বলা হয়। উম্মু হানি বিনতু আবূ তালেব হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ বলেন, আল্লাহ কুরাইশদের সাতটি বিষয়ে মর্যাদা দান করেছেনঃ

১) আমি তাদের মধ্য হতে।
২) নবুওয়াত তাদের মধ্য হতে এসেছে।
৩) কাবাগৃহের তত্ত্বাবধান।
৪) হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব পালন।
৫) আল্লাহ তাদেরকে হস্তীবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন।
৬) উক্ত ঘটনার পর কুরাইশরা দশবছর যাবৎ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো ইবাদত করেনি।
৭) আল্লাহ তাদের বিষয়ে কুরআনে পৃথক একটি সূরা নাযিল করেছেন যাতে তাদের ব্যতীত আর কারো আলোচনা করা হয়নি।

আয়াতসমূহঃ

সূরা আল-কুরাইশ (কুরাইশ গোত্র)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ ۝
উচ্চারণঃ লিঈলা-ফি কুরাইশ।
অর্থঃ যেহেতু কুরাইশরা অভ্যস্ত;
إِۦلَٰفِهِمْ رِحْلَةَ ٱلشِّتَآءِ وَٱلصَّيْفِ ۝
উচ্চারণঃ ঈলা-ফিহিম রিহলাতাশশিতাই ওয়াসসাঈফ।
অর্থঃ অভ্যস্ত শীত ও গ্রীষ্মের সফরে,
فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَٰذَا الْبَيْتِ ۝
উচ্চারণঃ ফালইয়া’বুদূ রাব্বা হাযাল বাইত।
অর্থঃ এই ঘরের রবের ইবাদাত তাদের করা উচিত।
الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍ وَآمَنُم مِّنْ خَوْفٍ ۝
উচ্চারণঃ আল্লাযী আত্য়ামাহুম মিন্ জু-ইওঁ ওয়া অমানাহুম মিন খাউফ।
অর্থঃ যিনি তাদের ক্ষুধামুক্তি দিয়েছেন এবং নিরাপদ রেখেছেন।
বিষয়বস্তুঃ
لِإِيْلٰفِ- শব্দের অর্থ : স্বাভাবিক ও অভ্যস্ত হওয়া। অর্থাৎ কোন কষ্ট ও বিরাগ অনুভব না করা। মুজাহিদ (রহঃ) বলেনঃ তারা ব্যবসায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে শীত ও গ্রীষ্মকালে ব্যবসায় করা তাদের জন্য কষ্টকর হত না। (সহীহ বুখারী)

কুরাইশদের প্রধান জীবনোপকরণ ছিল ব্যবসায়। প্রতি বছর তাদের বাণিজ্যিক কাফেলা দুবার অন্য দেশে সফর করত। তারা সেখান থেকে পণ্য নিয়ে আসত। শীতকালে গরম এলাকা ইয়ামান, আর গ্রীষ্মকালে ঠাণ্ডা এলাকা শাম সফর করত। কাবাঘরের খাদেম বলে আরবরা তাদের সম্মান করত। এজন্যই তাদের বাণিজ্যিক কাফেলা বিনা বাধায় সফর করত। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এ ঘরের একমাত্র মালিক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন যে ঘরের কারণে তারা বিনা বাধায় ব্যবসায় করতে পারে ও প্রভূত সম্মানের পাত্র হয়েছে। (أَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ) অর্থাৎ উক্ত ব্যবসায়-বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদেরকে খাদ্য দেন। اٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ)) অর্থাৎ সকল লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ হতে তাদেরকে নিরাপদে রেখেছেন। কারণ তারা হারামের অধিবাসী ও হারামের খাদেম। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
(وَضَرَبَ اللہُ مَثَلًا قَرْیَةً کَانَتْ اٰمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً یَّاْتِیْھَا رِزْقُھَا رَغَدًا مِّنْ کُلِّ مَکَانٍ فَکَفَرَتْ بِاَنْعُمِ اللہِ فَاَذَاقَھَا اللہُ لِبَاسَ الْجُوْعِ وَالْخَوْفِ بِمَا کَانُوْا یَصْنَعُوْنَ) “আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেথায় আসত সর্বদিক হতে তার প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তার অধিবাসীরা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল, ফলে তারা যা করত তজ্জন্য আল্লাহ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির।” (সূরা নাহল ১৬: ১১২)

তাই যে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষুধার সময় খাদ্য দান করেন, ভয় থেকে নিরাপত্তা দান করেন তার শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে কাবা ঘরের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা উচিত।

SALAH

সূরা আল-মাউন

সূরা আল-মাউন মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৭ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৭ টি। এ সূরায় কাফের ও মুনাফেকদের কতিপয় দুষ্কর্ম উল্লেখ করে তজ্জন্য জাহান্নামের শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে। এ সূরায় এমন সব নামাজীদেরকে ধ্বংসের বার্তা শুনানো হয়েছে যারা নিজেদের নামাজে গাফলতি করে এবং লোক দেখানো নামাজ পড়ে।

নামকরণঃ

শেষ আয়াতের শেষ শব্দটিকে এ সূরার নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

শানে নুযূলঃ

আল্লাহ তায়ালা মক্কাবাসীর হেদায়েত এর জন্য سورة الماعون নাজিল করেন । যে সব ব্যক্তিগণ সালাত এর ব্যাপারে উদাসীন এবং যারা ইয়াতিম ও অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করে না তাদের প্রতি ধ্বংসের বার্তা দিয়ে দিয়েছেন।

আয়াতসমূহঃ

সূরা আল-মাউন (সাহায্য-সহায়তা)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

أَرَءَيْتَ ٱلَّذِى يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ ۝
উচ্চারণঃ আরাআইতাল্লাযী ইউকাযযি বুবিদ্দীন।
অর্থঃ আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে বিচারদিবসকে মিথ্যা বলে?
فَذَٰلِكَ ٱلَّذِى يَدُعُّ ٱلْيَتِيمَ ۝
উচ্চারণঃ ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদু‘‘উল ইয়াতীম।
অর্থঃ সে সেই ব্যক্তি, যে এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়
وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلْمِسْكِينِ ۝
উচ্চারণঃ ওয়ালা-ইয়াহুদ্দু‘আলা-ত‘আ-মিল মিছকীন।
অর্থঃ এবং মিসকীনকে অন্ন দিতে উৎসাহিত করে না।
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ ۝
উচ্চারণঃ ফাওয়াইঁলুললিল মুসাল্লীন।
অর্থঃ অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজীর,
ٱلَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ ۝
উচ্চারণঃ আল্লাযীনাহুম ‘আন সালা-তিহিম ছা-হূন।
অর্থঃ যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বে-খবর;
ٱلَّذِينَ هُمْ يُرَآءُونَ ۝
উচ্চারণঃ আল্লাযীনা হুম ইউরাঊনা।
অর্থঃ যারা তা লোক-দেখানোর জন্য করে
وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ ۝
উচ্চারণঃ ওয়া ইয়ামনা‘ঊনাল মা‘ঊন।
অর্থঃ এবং নিত্য ব্যবহার্য্য বস্তু অন্যকে দেয় না।

SALAH

সূরা আল-কাওসার

সূরা আল কাওসার (আরবি: سورة الكوثر) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৮ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩ টি। কুরআনের সংক্ষিপ্ততম সূরা , যা দশটি শব্দ এবং বিয়াল্লিশটি অক্ষর নিয়ে গঠিত এবং পবিত্র কুরআনের ক্রমানুসারে সুরা আল-মাউনের পরে এবং সূরা আল-কাফিরুনের পূর্বে রয়েছে। আল কাওসার ত্রিশতম পারায় অবস্থিত এবং মুহাম্মদ হাদি মারেফাতের মতে নাজিলের ক্রমানুসারে এর অবস্থান ১৫ তমের দিকে যা ইবনে আব্বাসের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ইবনে ইসহাকের মতে, এটি পূর্ববর্তী "মাক্কী সূরা", যা মক্কায় ইসরা ও মি'রাজের কিছু আগে নাজিল হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
সূরাটি নবী মুহাম্মদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বলে। জান্নাতের অন্যতম নদী বা ঝর্ণা আল-কাওসার, তার সম্পর্কে আবদুল্লাহ বিন ওমর বলেন: আল্লাহর রসূল বলেছেন: "আল-কাওসার জান্নাতের একটি নদী, তার পাড় সোনার এবং তার গৌরব এলম ও নীলকান্তমণির চেয়ে উত্তম গন্ধ কস্তুরীর চেয়ে ভাল এবং এর পানি বরফের চেয়ে সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি।

নামকরণঃ
এই সুরার নাম টি এর প্রথম আয়াত থেকে উদ্ভূত। "কাওসার" শব্দটি কুরআনে একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি "আরবি: ق-س-ر" এর মূল থেকে উদ্ভূত, যা "অফুরন্ত " এর ওজনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যার অর্থ এমন প্রাচুর্য যা হ্রাস পায় না। আল কাওসার প্রথম আরবি অর্থ "প্রাচুর্য" এর কবিতায় ব্যবহৃত হয়। রাঘেব ইস্পাহানি তার বই The Book of Singularities তে "প্যারাডাইস ক্রিক" শব্দ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন,যে এটি নবী মুহাম্মাদের উপরের আল্লাহ বিরাট কল্যাণ ও অনুগ্রহ। মাজমাই আল-বাহরাইন এবং আবু মনসুর 'আব্দ আল-মালিক আল-সা'লাবির ফিকহ-এ তারিহির অর্থ "কল্যাণের প্রভু"। আল-আরবের ইবনে মাঞ্জুরী কাওসারের অর্থকে "সবকিছুতে ভাল" বলে মনে করেন এবং কাওসারের বিভিন্ন অর্থ ও ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। আল-কামুস আল-মুহিয়াত ফিরুজাবাদী আল-কাওসার অর্থ "প্রচুর পরিমাণে" এবং "খাঁড়ি" বা "করুণাময় মানুষ" এর মতো অন্যান্য অর্থকে বুঝিয়েছেন।
যদিও ইবনে আশুর, একজন সুন্নি তাফসিরবিদ, শুধুমাত্র সূরার নামকে "কাওসার" বলে মনে করেন।
শানে নুযূলঃ

যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায়, আরবে তাকে নির্বংশ বলা হয়। রসূলুল্লাহ্‌-এর পুত্র কাসেম আথবা ইবরাহীম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন কাফেররা তাকে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগল। ওদের মধ্যে 'আস ইবনে ওয়ায়েলের' নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রসূলুল্লাহ্‌ -এর কোন আলোচনা হলে সে বলতঃ আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোন চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চাচরণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল কাওসার অবতীর্ণ হয়।

আয়াতসমূহঃ

সূরা আল-কাওসার (প্রাচুর্য)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ۝
উচ্চারণঃ ইন্না আ'তাইনা-কাল্ কাওছার
অর্থঃ নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি।
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ۝
উচ্চারণঃ ফাসাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ান্'হা'র।
অর্থঃ অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানী করুন।
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ ۝
উচ্চারণঃ ইন্না শানিয়াকা হুয়া'আলআবতার।
অর্থঃ যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।

SALAH

সূরা কাফিরুন

সূরা আল কাফিরুন (আরবি: سورة الكافرون) পবিত্র কুরআনের ১০৯ তম সূরা। সূরাটির আয়াত সংখ্যা ৬। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয় তাই সূরাটি মাক্কী সূরার শ্রেণীভুক্ত। মুসলিম জীবনে এই সূরার তাৎপর্য অনেক কারণ এই সূরার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও ইবাদাতের কথা উল্ল্যেখ করা হয়েছে।

নামকরণঃ
এই সুরার নাম টি এর প্রথম আয়াত থেকে উদ্ভূত। "কাওসার" শব্দটি কুরআনে একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি "আরবি: ق-س-ر" এর মূল থেকে উদ্ভূত, যা "অফুরন্ত " এর ওজনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যার অর্থ এমন প্রাচুর্য যা হ্রাস পায় না। আল কাওসার প্রথম আরবি অর্থ "প্রাচুর্য" এর কবিতায় ব্যবহৃত হয়। রাঘেব ইস্পাহানি তার বই The Book of Singularities তে "প্যারাডাইস ক্রিক" শব্দ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন,যে এটি নবী মুহাম্মাদের উপরের আল্লাহ বিরাট কল্যাণ ও অনুগ্রহ। মাজমাই আল-বাহরাইন এবং আবু মনসুর 'আব্দ আল-মালিক আল-সা'লাবির ফিকহ-এ তারিহির অর্থ "কল্যাণের প্রভু"। আল-আরবের ইবনে মাঞ্জুরী কাওসারের অর্থকে "সবকিছুতে ভাল" বলে মনে করেন এবং কাওসারের বিভিন্ন অর্থ ও ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। আল-কামুস আল-মুহিয়াত ফিরুজাবাদী আল-কাওসার অর্থ "প্রচুর পরিমাণে" এবং "খাঁড়ি" বা "করুণাময় মানুষ" এর মতো অন্যান্য অর্থকে বুঝিয়েছেন।
যদিও ইবনে আশুর, একজন সুন্নি তাফসিরবিদ, শুধুমাত্র সূরার নামকে "কাওসার" বলে মনে করেন।

শানে নুযূলঃ
হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, ওলীদ ইবনে মুগীরা, আস ইবনে ওয়ায়েল, আসওয়াদ ইবনে আবুদল মোত্তালিব ও উমাইয়া ইবনে খলফ প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কয়েকজন একবার রসূলুল্লাহ্‌ - এর কাছে এসে বললঃ আসুন, আমরা পরস্পরের মধ্যে এই শান্তি চুক্তি করি যে, এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের এবাদত করবেন এবং এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের এবাদত করব।
তাবরানীর রেওয়ায়েতে হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, কাফেররা প্রথমে পারস্পরিক শান্তির স্বার্থে রসূলুল্লাহ্‌ - এর সামনে এই প্রস্তাব রাখল যে, আমরা আপনাকে বিপুল পরিমাণে ধনৈশ্বর্য দেব, ফলে আপনি মক্কার সর্বাধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে যাবেন। আপনি যে মহিলাকে ইচ্ছা বিবাহ করতে পারবেন। বিনিময়ে শুধু আমাদের উপাস্যদেরকে মন্দ বলবেন না। যদি আপনি এটাও মেনে না নেন, তবে এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের এবাদত করব এবং এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের এবাদত করবেন।
আবু সালেহ্‌-এর রেওয়ায়েতে হযরত ইবনে আব্বাস বলেনঃ মক্কার কাফেররা পারস্পরিক শান্তির লহ্ম্যে এই প্রস্তাব দিল যে, আপনি আমাদের কোন প্রতিমার গায়ে কেবল হাত লাগিয়ে দিন, আমরা আপনাকে সত্য বলব। এর পরিপ্রেহ্মিতে জিবরাঈল সূরা কাফিরূন নিয়ে আগমন করলেন। এতে কাফেরদের ক্রিয়াকর্মের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ এবং আল্লাহ্‌ তা'আলার অকৃতিম এবাদতের আদেশ আছে।

আয়াতসমূহঃ

সূরা কাফিরুন (অস্বীকারকারীগণ)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ۝
উচ্চারণঃ কু'ল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ৷
অর্থঃ বলুন, ‘হে কাফিররা!
لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ ۝
উচ্চারণঃ লাআ বুদু মা তা'আবুদুন ৷
অর্থঃ আমি তার ‘ইবাদাত করি না যার ‘ইবাদাত তোমরা কর।
وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ ۝
উচ্চারণঃ অলা আনতুম আবিদুনা মা আ'বুদ ৷
অর্থঃ এবং তোমরাও তাঁর ‘ইবাদাতকারী নও যাঁর ‘ইবাদাত আমি করি।
وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ ۝
উচ্চারণঃ অলা আনা আবিদুম মা আবাত্তুম ৷
অর্থঃ এবং আমি ‘ইবাদাতকারী নই তার যার ‘ইবাদাত তোমরা করে আসছ।
وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ ۝
উচ্চারণঃ অলা আনতুম আবিদুনা মা আ'বুদ ৷
অর্থঃ তোমরা এবাদতকারী নও, যার এবাদত আমি করি।
لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ ۝
উচ্চারণঃ লাকুম দিনুকুম অলিয়া দিন ৷
অর্থঃ তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।

সূরা কাফিরুনের ফজিলতঃ
সূরা আল কাফিরুন পাঠের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। বিভিন্ন হাদীসে এ সূরার বেশ কিছু ফাযীলত বর্ণিত হয়েছে। আসুন তা জেনে নেই।

১) জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াফের দু’ রাকা‘আত সালাতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন।” (মুসলিম; ১২১৮)

২) ঘুমানোর পূর্বে সূরা কাফিরুন পাঠে রাসূল সালাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন। নবীজি বলেন, ‘যখন শয্যা গ্রহণ করবে তখন পাঠ করবে ‘ক্বুল ইয়া আইয়্যূহাল কাফেরূন’- শেষ পর্যন্ত তা পাঠ করবে। কেননা উহার মধ্যে শির্ক থেকে মুক্ত হওয়ার ঘোষণা রয়েছে।’ (তবরাণী শরীফ)

৩) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ দু’টি সূরা দিয়ে ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করেছেন”। (মুসলিম; ৭২৬)

৪) ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ফজরের পূর্বের দু’ রাকা‘আতে এবং মাগরিবের পরের দু’রাকাআতে এ দু’ সূরা পড়তে বিশোর্ধ বার বা দশোর্ধ বার শুনেছি।” (মুসনাদে আহমাদ;২/২৪) অন্য বর্ণনায় এসেছে, “চব্বিশোর্ধ অথবা পঁচিশোর্ধবার শুনেছি”। (মুসনাদে আহমাদ;২/৯৫)

৫) ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক মাস পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি তিনি ফজরের পূর্বের দু’ রাকাআতে ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ এ দু’সূরা পড়তেন।” (তিরমিয়ী; ৪১৭, ইবনে মাজাহ; ১১৪৯, মুসনাদে আহমাদ; ২/৯৪)

৬) তাছাড়া জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, আমাকে নিদ্রার পূর্বে পাঠ করার জন্যে কোন দো‘আ বলে দিন। “তিনি সূরা কাফিরূন পাঠ করতে আদেশ দিলেন এবং বললেন এটা শির্ক থেকে মুক্তিপত্র।” (আবু দাউদ;৫০৫৫, সুনান দারমী;২/৪৫৯, মুস্তাদরাকে হাকিম;২/৫৩৮)

৭) অন্য হাদীসে এসেছে, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সূরা ‘কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন’ কুরআনের এক চতুর্থাংশ”। (তিরমিয়ী; ২৮৯৩, ২৮৯৫) । অর্থাৎ সূরা আল কাফিরুন চার বার পাঠ করলে একবার কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। (সুবহানআল্লাহ )

SALAH

সূরা আন নাসর

সূরা আন নাসর (আরবি: سورة النصر) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১০ তম সূরা। তাফসীরকারীদের সর্বসম্মত অভিমত এই যে, সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩টি। সূরা নছর-এর অপর নাম সূরা "তাওদী"। "তাওদী" শব্দের অর্থ বিদায় করা। এ সূরায় রসূলে কারীম-এর ওফাত নিকটবর্তী হওয়ার ইঙ্গিত আছে বিধায় এর নাম "তাওদী" হয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে, সূরা নছর কোরআনের সর্বশেষ একদফায় পূর্ণাঙ্গভাবে অবতীর্ণ সূরা। অর্থাৎ, এরপর কোন সম্পূর্ণ সূরা একদফায় অবতীর্ণ হয়নি, অন্যান্য সূরার আয়াত নাযিল হয়েছে। অত:এব কারো কারো বর্ণনায় সূরা আন নছরের পর কোন কোন আয়াত নাযিল হওয়ার যে তথ্য পাওয়া যায়, তা এর পরিপন্থী নয়। সূরা ফাতেহাকে এই অর্থেই কোরানের সর্বপ্রথম সূরা বলা হয়। আর্থাৎ, সম্পূর্ণ সূরারূপে একদফায় সূরা ফাতিহাই সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছে। সুতরাং সূরা আলাক, মুদ্দাস্‌সির ইত্যাদির কোন কোন আয়াত পূর্বে নাযিল হলেও তা এর পরিপন্থী নয়।

নামকরণঃ

প্রথম আয়াত এর মধ্যে উল্লেখিত নসর ( আরবী ) শব্দকে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

শানে নুযূলঃ
এই সূরার আয়াতসমূহ নবী মুহাম্মদ কে উদ্দেশ্য করে বর্ণিত। মক্কা বিজয়ের লক্ষণসমূহ পরিস্ফুট হয়ে ওঠা এবং এ বিজয়ের মাধ্যমে দুনিয়াতে ইসলামের রাসুল মুহাম্মদ -এর আগমন ও অবস্থানের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সমাসন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে এই সূরাটি নাযিল হয়ে থাকবে। এ সূরার অন্যতম তাৎপর্য এই যে মৃত্যু নিকটবর্তী প্রতীয়মান হলে মুসলমান ব্যক্তিকে তাসবীহ ও ইস্তেগফার করতে হবে। আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, সূরা আন নাসর নাযিল হওয়ার পর রাসুল প্রত্যেক নামাযের পর ‘সুবহানাকা রাব্বানা ওয়া বেহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ দুয়াটি পাঠ করতেন। উম্মে সালমা থেকে বর্ণিত যে, সূরা আন নছর নাযিল হওয়ার পর থেকে রাসুল (সা:) সর্বাবস্থায় ‘সুবহানাল্লাহে ওয়া বেহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আ তুউবু ইলাইহি’ দুয়াটি পাঠ করতেন এবং, অতঃপর, এই দুয়া পাঠের যুক্তিস্বরূপ সূরাটি তিলাওয়াত করতেন।

আয়াতসমূহঃ

সূরা নাসর (বিজয়,সাহায্য)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ ۝
উচ্চারণঃ ইযা জা- আনাসুরুল্লহি ওয়াল ফাতহু।
অর্থঃ যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا ۝
উচ্চারণঃ ওয়ারা আইতান্‌না-সা ইয়াদখুলুউনা, ফি দ্বীনিল্লাহি আফওয়া-জা।
অর্থঃ এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا ۝
উচ্চারণঃ ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াস্তাগ ফিরহ্‌; ইন্নাহু কা-না তাও-ওয়া-বা।
অর্থঃ তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।

SALAH

সূরা লাহাব

সূরা আল লাহাব (আরবি: سورة اﻟﻠﻬﺐ) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১১ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫ এবং সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
আবু লাহাবের আসল নাম ছিল আবদুল ওয্‌যা। সে ছিল আবদুল মোত্তালিবের অন্যতম সন্তান। গৌরবর্ণের কারণে তার ডাক নাম হয়ে যায় আবু লাহাব। কোরআন পাক তার আসল নাম বর্জন করেছে। কারণ সেটা মুশরিকসুলভ। এছাড়া "আবু লাহাব" ডাক নামের মধ্যে জাহান্নামের সাথে বেশ মিলও রয়েছে। সে রসূলুল্লাহ্‌ - এর কট্টর শত্রু ও ইসলামের ঘোর বিরোধী ছিল এবং রসূলুল্লাহ্‌ -কে কষ্ট দেয়ার প্রয়াস পেত। তিনি যখন মানুষকে ঈমানের দাওয়াত দিতেন, তখন সে সাথে সাথে যেয়ে তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করত।

শানে নুযূলঃ
আল্লাহ্‌ একটি আয়াত অবতীর্ণ করলে রসূলুল্লাহ্‌ সাফা পর্বতে আরোহণ করে কোরাইশ গোত্রের উদ্দেশে "আবদে মানাফ" ও "আবদুল মোত্তালিব" ইত্যাদি নাম সহকারে ডাক দিলেন। এভাবে ডাক দেয়া তখন আরবে বিপদাশংকার লক্ষণ রূপে বিবেচিত হত। ডাক শুনে কোরাইশ গোত্র পর্বতের পাদদেশে একত্রিত হল। রসূলুল্লাহ্‌ বললেনঃ "যদি আমি বলি যে, একটি শত্রুদল ক্রমশঃই এগিয়ে আসছে এবং সকাল বিকাল যে কোন সময় তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি?" সবাই একবাক্যে বলে উঠলঃ "হাঁ, অবশ্যই বিশ্বাস করব।" অতঃপর তিনি বললেনঃ "আমি (শিরক ও কুফরের কারণে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নির্ধারিত) এক ভীষণ আযাব সর্ম্পকে তোমাদেরকে সতর্ক করছি।" একথা শুনে আবু লাহাব বললঃ "ধ্বংস হও তুমি, এজন্যেই কি আমাদেরকে একত্রিত করেছ?" অতঃপর সে রসূলুল্লাহ্‌ -কে পাথর মারতে উদ্যত হল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়।

আয়াতসমূহঃ

সূরা লাহাব (জ্বলন্ত অঙ্গার)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ ۝
উচ্চারণঃ তাব্বাত ইয়াদ~আবি লাহাবিও ওয়া তাব্ব।
অর্থঃ ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।
مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ ۝
উচ্চারণঃ মা~আগনা-'আনহু মা-লুহু ওয়ামা-কাসাব্।
অর্থঃ তার ধন-সম্পদ আর সে যা অর্জন করেছে তা তার কোন কাজে আসল না।
سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ۝
উচ্চারণঃ সাইয়াছলা-না-রান যা-তা লাহাবিও।
অর্থঃ অচিরেই সে শিখা বিশিষ্ট জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে,
وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ۝
উচ্চারণঃ ওয়ামরাআতুহু; হাম্মা-লাতাল হাত্বাব।
অর্থঃ আর তার স্ত্রীও- যে কাঠবহনকারিণী (যে কাঁটার সাহায্যে নবী-কে কষ্ট দিত এবং একজনের কথা অন্যজনকে ব’লে পারস্পরিক বিবাদের আগুন জ্বালাত)।
فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍ ۝
উচ্চারণঃ ফী জ্বীদিহা-হ্বাবলুম মিম মাসাদ্।
অর্থঃ আর (দুনিয়াতে তার বহনকৃত কাঠ-খড়ির পরিবর্তে জাহান্নামে) তার গলায় শক্ত পাকানো রশি বাঁধা থাকবে।

SALAH

সূরা আল-ইখলাস

সুরার নাম ‘ইখলাস’। ‘সূরা ইখলাস’ পবিত্র কোরআন শরীফের ১১২ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১টি। আল ইখলাস সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

সুরার নামকরণঃ

সুরার প্রকৃত মর্মার্থের ভিত্তিতেই সুরাটির নামকরণ করা হয়েছে। এ সুরাটিতে মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এ সুরাটি মানুষকে নিশ্চিত শিরক থেকে মুক্তি দিয়ে একত্ববাদের উপর একনিষ্ঠ বিশ্বাস স্থাপনে মানুষ হয় মুখলিস বান্দায় পরিণত হয়।

আয়াতসমূহঃ

সূরা আল-ইখলাস (একনিষ্ঠতা)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ۝
উচ্চারণঃ কুল হুয়াল্লাহু আহাদ।
অর্থঃ (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক।
اللَّهُ الصَّمَدُ ۝
উচ্চারণঃ আল্লাহুচ্চামাদ।
অর্থঃ আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ۝
উচ্চারণঃ লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ।
অর্থঃ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।
وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ۝
উচ্চারণঃ ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।
অর্থঃ আর তার সমতুল্য কেউ নেই।
সূরা ইখলাসের ফজিলতঃ
সুরা ইখলাস-এর ভাব ও মর্মার্থ বুঝে পড়লে তাতে বান্দার অন্তরে আল্লাহর গুণাবলী গেঁথে যাবে। মনে প্রাণে ওই ব্যক্তি হয়ে উঠবে শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হবে। আর তার বিনিময়ে সে লাভ করবে দুনিয়া ও পরকালের অনেক উপকারিতা ও ফজিলত।

একবার এক সাহাবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলেন, এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। ’ (বুখারি, তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। তবে ঋণগ্রস্ত হলে তা ক্ষমা হবে না। ’ (তিরমিজি)

হজরত সাহল ইবন সাদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দারিদ্র্যতার অভিযোগ করল তিনি বললেন, ‘যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে। এ আমল করার ফলে কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্র্যতা দূর হয়ে যায়। ’ (তাফসিরে কুরতুবি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হয়। ’ (ইবনে কাসির)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করতে শুনলেন। তিনি বললেন, ‘এটা তার অধিকার। ’ সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, তার অধিকার কী? তিনি উত্তরে বললেন- ‘তার অধিকার হচ্ছে জান্নাত। ’ (মুসনাদে আহমাদ)

SALAH

সূরা আল-ফালাক

সূরা আল-ফালাক (আরবি: سورة الفلق; নিশিভোর) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১৩ তম সূরা; এর আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৫ এবং রূকু, তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১। সূরা আল-ফালাক মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর পাঁচ আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা হয়। এই সূরাটি এবং এর পরবর্তী সূরা আন-নাসকে একত্রে মু'আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু'টি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বা ঘুমের আগে এই সূরাটি পড়া একটি ঐতিহ্যগত সুন্নত।

সুরার নামকরণঃ

সূরা ফালাক ও সূরা আন-নাস আলাদা আলাদা সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সাথে এত বেশি নিকট সম্পর্কিত যে এদেরকে একত্রে “মু’আওবিযাতাইন” (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে ডাকা হয়; আর এই সূরা দু’টি নাযিলও হয়েছে একই সাথে একই ঘটনার পরি-প্রেক্ষিতে।

শানে নুযূল
সূরা আল ফালাক ও পরবর্তী সূরা নাস একই সাথে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহু্দী রসূলুল্লাহ্‌- এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহু্দী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রসুলুল্লাহ লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দুটি পড়ে ফুক দেওয়ায় গিরুগুলো সাথে সাথে খুলে য়ায এবং সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।

হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ - এর উপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা -কে বললেনঃ আমার রোগটা কি, আল্লাহ্ তা'আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ'সাম জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হলঃ কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে 'বির যরোয়ান' কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ সে কূপে গেলেন এবং বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।

মুসনাদে আহমদের রেওয়ায়েতে আছে, রসুলুল্লাহ -এর এই অসুখ ছয় মাস স্থায়ী হয়েছিল।

আয়াতসমূহঃ

সূরা আল-ফালাক (নিশিভোর)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلۡفَلَقِ ۝
উচ্চারণঃ ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক।
অর্থঃ বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
مِن شَرِّ مَا خَلَقَ ۝
উচ্চারণঃ মিন শাররি মাখালাক্ব।
অর্থঃ তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ۝
উচ্চারণঃ ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইযা অক্বাব।
অর্থঃ অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّـٰثَـٰتِ فِى ٱلۡعُقَدِ ۝
উচ্চারণঃ ওয়া মিন শাররিন নাফ্‌ফাসাতি ফিল্‌ উকাদ।
অর্থঃ গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ۝
উচ্চারণঃ ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।
অর্থঃ এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
সূরা আল-ফালাকের ফজিলতঃ
আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মিসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। - (ইবনে-কাসীর)

সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের (রাঃ)- এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তা'আলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থা ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিল নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই। এক সফরে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ওকবা ইবনে আমেন (রাঃ)-কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বললেনঃ এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো।

অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। - (আবু দাউদ, নাসায়ী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (রাঃ) বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে খুঁজতে বের হলাম। যখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা এখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। - (মাযহারী)

SALAH

সূরা আন-নাস

সূরা আন-নাস (আরবি: سورة الناس; মানবজাতি) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১৪ তম এবং সর্বশেষ সূরা; এর আয়াত, অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৬ এবং রূকু, তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ১। সূরা আন-নাস মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর ছয় আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা হয়। এই সূরাটি এবং এর পূর্ববর্তী সূরা আল-ফালাককে একত্রে মু'আওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু'টি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বা ঘুমের আগে এই সূরাটি পড়া একটি ঐতিহ্যগত সুন্নত।

সুরার নামকরণঃ

সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস আলাদা আলাদা সূরা হলেও এদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ও উভয়ের বিষয়বস্তু পরস্পরের সাথে এত বেশি নিকট সম্পর্কিত যে এদেরকে একত্রে “মু’আওবিযাতাইন” (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দু’টি সূরা) নামে ডাকা হয়; আর এই সূরা দু’টি নাযিলও হয়েছে একই সাথে একই ঘটনার পরি-প্রেক্ষিতে।

শানে নুযূল
সূরা ফালাক ও পরবর্তী সূরা আন নাস একই সাথে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহু্দী রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)- এর উপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহু্দী জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কুপের মধ্যে আছে। রসূলুল্লাহ্‌ লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দুটি পড়ে ফুক দেওয়ায় গিরুগুলো সাথে সাথে খুলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।

হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ্‌ - এর উপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হযরত আয়েশা -কে বললেনঃ আমার রোগটা কি, আল্লাহ্ তা'আলা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দুব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বললঃ ইনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক লবীদ ইবনে আ'সাম জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হলঃ কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে 'বির যরোয়ান' কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ তিনি কূপে গেলেন এবং বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।

আয়াতসমূহঃ

সূরা আন-নাস (মানবজাতি)


بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝

قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ ۝
উচ্চারণঃ ক্বুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
অর্থঃ বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের পালনকর্তার।
مَلِكِ ٱلنَّاسِ ۝
উচ্চারণঃ মালিকিন্নাস।
অর্থঃ মানুষের অধিপতির,
إِلَـٰهِ ٱلنَّاسِ ۝
উচ্চারণঃ ইলাহিন্নাস।
অর্থঃ মানুষের মা'বুদের,
مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ۝
উচ্চারণঃ মিন শাররীল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস।
অর্থঃ তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে,
الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ ۝
উচ্চারণঃ আল্লাযি ইউওয়াস ইসু ফী সুদুরিন্নাস।
অর্থঃ যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ ۝
উচ্চারণঃ মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
অর্থঃ জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।

Next Topic